রিসালাত (الرَّسَالَةُ) (পাঠ ৬)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - আকাইদ | NCTB BOOK
738

রিসালাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ বার্তা, খবর, চিঠি বা সংবাদ বহন। রাসুলগণ যে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করেন তাকে বলা হয় রিসালাত। আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুলগণকে নানা দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যেমন: মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে আহ্বান করা, সত্য দীন প্রচার করা, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, মহান আল্লাহর বাণী পৌছে দেওয়া ইত্যাদি। রাসুলগণের এ সকল দায়িত্বকে এক কথায় রিসালাত বলা হয়।

ইসলামি আকিদায় তাওহিদের পরই রিসালাতের স্থান। এক্ষেত্রে নবুয়ত ও রিসালাত প্রায় সমার্থক।
নবি-রাসুলগণের পরিচয়
নবি-রাসুলগণ হলেন মহান আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বা মনোনীত বান্দা। নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁদের নির্বাচিত করেছেন। যিনি নবুয়তের দায়িত্ব পালন করেন তিনি হলেন নবি। আর রিসালাতের দায়িত্ব পালনকারীকে বলা হয় রাসুল।
নবি-রাসুলগণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ। তাঁরা কেউ আল্লাহর অংশ বা আল্লাহ তায়ালার পুত্র ছিলেন না। বরং মানুষের মধ্য থেকেই আল্লাহ পাক তাঁদের নির্বাচন করেছেন। তাঁরা বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা মা'সুম বা নিষ্পাপ ছিলেন। তাঁরা সর্বদা নেক ও ভালো কাজ করতেন। অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতেন। তাঁরা উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
নবি-রাসুলগণ মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরেন। তাঁরা মানুষকে মহান আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা দিতেন। তাঁরা মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী ও বিধান পৌঁছে দিতেন। আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে মানুষকে হাতেকলমে শিক্ষা দিতেন। তাঁরা সবসময় মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন।
নবি-রাসুলের পার্থক্য
নবি ও রাসুলের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যাঁদের নিকট আসমানি কিতাব এসেছিল তাঁরা ছিলেন রাসুল। আর যাঁদের নিকট কোনো আসমানি কিতাব আসেনি তাঁরা হলেন নবি। নবিরা পূর্ববর্তী রাসুলের প্রচারিত দীন (ধর্ম) প্রচার করতেন। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে অনেক নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই নবি-রাসুল এসেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ وَرُسُلًا لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ

অর্থ: অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি যাদের কথা ইতোপূর্বে অপনাকে বলেছি এবং অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি যাদের কথা আপনাকে বলিনি।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৪)

কুরআন মাজিদ বা কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিসে তাঁদের সংখ্যা সুর্নিদিষ্ট করে বর্ণনা করা হয়নি। এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাস রাখব, আল্লাহ তায়ালা যত নবি রাসুল পাঠিয়েছেন আমরা সবার ওপর ইমান রাখি। সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.)। আর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। তাঁর পর দুনিয়াতে আর কোনো নবি আসেননি, আসবেনও না।

নবি-রাসুল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা
মহান আল্লাহ নানা কারণে মানুষের মধ্যে নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। নিম্নে এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো:

  • নবি-রাসুলগণ মানুষকে আল্লাহ পাকের পরিচয় জানিয়েছেন।
  • তাঁরা আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ও সত্য দীনের প্রতি আহবান করতেন।
  • ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদির পার্থক্য নবি-রাসুলগণই শিক্ষা দিতেন।
  • তাঁরা মানুষকে উন্নত ও উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিতেন।
  • তাঁরা মানুষকে জান্নাতে যাওয়ার পথ দেখাতেন। কীভাবে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা যায় সে শিক্ষা দিতেন।
  • তাঁরা মানুষের নিকট আসমানি কিতাবসমূহের বাণী পৌঁছে দিতেন।
  • হাতেকলমে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার বিধান শিক্ষা দিতেন।

রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব
রিসালাতে বিশ্বাস করার গুরুত্ব অপরিসীম। তাওহিদের পরই রিসালাতের স্থান। রিসালাতে অর্থাৎ নবি- রাসুলগণকে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারে না। কেননা নবি-রাসুলগণই আমাদের আল্লাহ তায়ালার পরিচয় জানিয়েছেন। তার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস না করলে আল্লাহ তায়ালা ও তার বাণীকে অস্বীকার করা হয়। অতএব, ইমানের অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
নবি-রাসুলগণ ছিলেন আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা ও প্রেরিত মানব। মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁদের প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহর প্রেরিত সব নবি-রাসুলের প্রতি আমরা ইমান আনব।
তাঁদের আনীত বাণীকে সম্মান করব। আর সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দেখানো পথে আমাদের জীবন পরিচালনা করব।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...